কোভিড-১৯ মহামারির কারণে পোশাক শিল্পকে এখন নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এই শিল্পের টেকসই ভবিষ্যৎ ও প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষ হিসেবে রয়েই গেছে। বৈশ্বিক মহামারির কথা বাদ দিলেও ২০২০-এর এই দশক ‘প্রকৃত পদক্ষেপের’ দশক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যেখানে অনেক ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতা বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এ ধরনের লক্ষ্য নির্ধারণ মৌলিকভাবে জোরদারভাবে পরিবেশগত প্রভাব নির্ণয় ও পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভর করছে; যে পদ্ধতি ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রণীত, সমালোচক ও বিনিয়োগকারীদের তোলা প্রশ্নের সঠিক জবাব দেয়, এবং উপযুক্ত পরিপ্রেক্ষিতে সঠিক ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
শিল্পের পরিসরজুড়ে নিজেদের প্রভাব টিকিয়ে রাখতে ব্র্যান্ডগুলোর অগ্রাধিকারে বৈচিত্র রয়েছে। তবে একটা বিষয় সবার ক্ষেত্রে একই- তা হলো স্বচ্ছতা। পরিবেশগত প্রভাব চিহ্নিত করতে তা অবশ্যই দৃশ্যমান ও তুলনীয় হতে হবে; কাজেই পোশাক শিল্পে জলবায়ুর প্রভাব বুঝতে ও মোকাবিলায় পুরো সরবরাহ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা গুরুত্বপূর্ণই রয়ে গেছে।
‘স্বচ্ছতার নিমিত্তেই কেবল স্বচ্ছতা নয়। কোম্পানিগুলো যে তথ্য প্রকাশ করবে, সেগুলো সবার পাওয়ার সুযোগ থাকতে হবে এবং এসব তথ্য এতটাই বিস্তারিত হতে হবে যেন এগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে পদক্ষেপ নেওয়া যায়। প্রকাশিত এই তথ্য দিয়ে আমরা প্রত্যেকে কী করি, ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য আমরা এগুলো কীভাবে ব্যবহার করি, সেটাই মুখ্য বিষয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে বৈশ্বিক ফ্যাশন শিল্পে পদ্ধতিগত ও অবকাঠামোগত পরিবর্তনের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো স্বচ্ছতা।’ ফ্যাশন ট্রান্সপারেন্সি ইন্ডেক্স ২০২০, ফ্যাশন রেভোল্যুশন
কেবল নিজেদের সক্ষমতার আওতায় সামাজিক ও পরিবেশগত উদ্বেগগুলো চিহ্নিত ও শনাক্ত করতেই নয়, কাঁচামালের সরবরাহ দৃঢ় করে, বাজারে গতি এনে, অংশীদারত্ব জোরদার করে এবং সরবরাহে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা বা বৈচিত্র আনার কৌশল নির্ধারণের মাধ্যমে বাণিজ্যিক দক্ষতা গড়ে তুলতেও ব্র্যান্ডগুলো সরবরাহ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা প্রতিবেদনে বিনিয়োগ করেছে।
স্বচ্ছতার প্রয়োজনীয়তা আর নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রাপ্তি পুরোপুরি ভিন্ন বিষয়। ব্র্যান্ডগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ হলো সরবরাহ ব্যবস্থার বিপরীত প্রান্তে উৎপাদকদের কাছ থেকে জোরালো ও প্রতিনিধিত্বমূলক তথ্য প্রাপ্তি। এটা খুবই বিরল যে সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্র্যান্ডগুলো নিজেই প্রাথমিক তথ্য সরবরাহ করবে, বিশেষ করে কাঁচামাল পর্যায়ে- তাদের ওই পর্যায় পর্যন্ত বিস্তার নেই। যদিও তন্তু থেকে তৈরি পোশাক পর্যন্ত কাজ করা কিছু প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম রয়েছে।
তথ্যের ঘাটতি মেটাতে ব্র্যান্ডগুলো বিশেষজ্ঞদের নিশ্চায়ন কর্মসূচির দিকে তাকিয়ে থাকে, যেসব কর্মসূচি প্রস্তুতকারক পর্যায়ে কাজ করে, সরাসরি তথ্য সংগ্রহ ও নিশ্চায়ন করে যেন ব্র্যান্ডগুলো সেগুলোয় বিশ্বাস রাখতে পারে এবং এসব তথ্য ব্যবহার করে প্রচেষ্টা অব্যাহত, লক্ষ্য নির্ধারণ ও টেকসই লক্ষের দিকে অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে পারে। মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা ব্র্যান্ডগুলোর জন্য বৈচিত্রময় পদক্ষেপ নিতে সহায়ক হয়, যার মধ্যে জীববৈচিত্র ও পানি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত পদক্ষেপও রয়েছে। এতে তারা কৃষিজ অনুশীলনের উদীয়মান ধারার অগ্রভাগে থাকার সুযোগ পায়।
এ ক্ষেত্রে ইউএস কটন দৃঢ় ও সময়োপযোগী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। বহু বছর ধরে ইউএস ফিল্ডপ্রিন্ট ডেটার মাধ্যমে কৃষকদের ব্যক্তিগত উৎপাদনশীলতা, লাভজনকতা ও সক্ষমতা মূল্যায়নে ব্যবহার হয়ে এসেছে এবং ইউএস কটনের জাতীয় টেকসই লক্ষমাত্রা-২০২৫-এর দিকে জাতীয় পর্যায়ের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে ব্যবহার হচ্ছে।
পরিবেশগত প্রতিবেদনের প্রয়োজনীয়তাসহ মাঠ পর্যায়ের তথ্যের ব্যাপারে ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতাদের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সুবিধাদি ২০২০ সালে ইউএস কটন ট্রাস্ট প্রটোকলের মাধ্যমে আরও জোরদার করা হয়েছে। ট্রাস্ট প্রটোকল ইউএন সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলকে সমর্থন করে, তুলা চাষে সেরা অনুশীলনে উৎসাহ দেয় এবং ইউএস কটন ব্যবহারকারী ব্র্যান্ডগুলোকে তাদের সক্ষমতার লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা করতে নিশ্চিতকৃত তথ্য সরবরাহ করে।
‘কার্বন নিঃসরণ নিয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কোম্পানিগুলোর উপকরণ বর্তমানে কোত্থেকে আসছে, সে বিষয়ে ঠিকঠাক চিত্রায়ন এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারীরা যে জ্বালানি ব্যবহার করছে, সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন। এটি সঠিক বেঞ্চমার্ক ও বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরবে, যা জ্বালানি ব্যবহারের সেরা অনুশীলনের দিকে আপনার ব্যবসার মোড় ঘোরাতে প্রয়োজন।’- লিন্ডা গ্রির, ইকোটেক্সটাইল নিউজ ফেব্রুয়ারি/মার্চ ২০২০
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার লক্ষ্য নির্ধারণে বৃহত্তর পোশাক খাতের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করা রাষ্ট্রায়ত্ত কার্পাস উৎপাদন কর্মসূচি এটি, যা ভবিষ্যতে দূরদর্শী ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতাদের প্রবল আগ্রহে পরিণত হবে। তথ্যটি নিজের কথাই বলে- টেকসই কার্পাস উৎপাদনে অগ্রগামী ও পরিমাপযোগ্য সমাধানের জন্য ইউএস কটন ও ইউএস কটন ট্রাস্ট প্রটোকলে নিবিড়ভাবে আলোকপাত করে।