কোনো কাপড় বা পোশাকের নান্দনিক আবেদন এর বোধগম্য বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে নিহিত। বৈশিষ্ট্যগুলোর কয়েকটি হলো হাতের কাজ, উজ্জ্বলতা ও গঠন। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় তৈরি কাপড়ে আরও সাবলীলভাবে হাতের কাজ করা যায়। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা কাপড়কে আরও উজ্জ্বল ও উন্নত গঠনের করে।
এসব বৈশিষ্ট্য স্বাভাবিকভাবেই কাপড়ের লোমশতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর এর শুরুটা হয় সুতার লোমশতা ও ভারসাম্যপূর্ণতা দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় তৈরি সুতা ও কাপড়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নয় এমন তুলায় তৈরি সুতা ও কাপড়ের তুলনামূলক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের তুলার পরিমাণ বাড়ালে সুতা ও কাপড়ের লোমশতা কমতে থাকে এবং ভারসাম্যপূর্ণতা আরও ভালো হয়।
তুরস্ক ও ভারতে ভিন্ন ভিন্ন স্বাধীন পরামর্শক দিয়ে এসব গবেষণা করা হয়েছে। গুণগত ও পরিমাণগত উভয়ভাবেই আঁশের মিশ্রণে যুক্তরাষ্ট্রের তুলার পরিমাণ বাড়িয়ে গবেষণা চালানো হয়। এসব গবেষণার ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের তুলাসমৃদ্ধ সুতায় তৈরি কাপড়ের পক্ষে যায়।
নিচের ছকে তুরস্কের গবেষণায় বিভিন্ন অনুপাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের তুলার মিশ্রণে তৈরি সুতার তুলনা দেখানো হয়েছে। উভয় তুলাই যন্ত্রের ব্যবহারে উৎপাদন ও বীজ থেকে আলাদা করা হয়েছে। মিশ্রণে যুক্তরাষ্ট্রের তুলার পরিমাণ যথাক্রমে ৩৬.৪% থেকে ৪৭.৭৩% এবং পরে সেখান থেকে ৫৯.০৯% করা হলে ভারসাম্যপূর্ণতার (CVm%) মান ১৭.১ থেকে কমে গিয়ে ১৬.৭ এবং পরে সেখান থেকে ১৬.৩ হয় (উন্নতি ঘটে ২.৩৪% ও ২.৪%) এবং লোমশতা ৬.২ থেকে কমে গিয়ে ৫.৮৭ এবং পরে সেখান থেকে ৫.১ হয় (উন্নতি ঘটে ৫.৩২% ও ১৩.১২%)
একই গবেষণার জন্য, নিচের দুটি গ্রাফে যুক্তরাষ্ট্রের তুলার অনুপাত বাড়ানোয় ভারসাম্যপূর্ণতা, লোমশতা ও অসম্পূর্ণতার (আইপিআই) উন্নতিগুলো দেখানো হয়েছে। একই সঙ্গে দেখানো হয়েছে, আনুপাতিক হারে ‘ববিন’ ও ‘কোনে’ লোমশতার উন্নতি। সুতাকাটার চূড়ান্ত পণ্য হলো সুতার ‘কোন’, যা পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলোয় ব্যবহার হয়। আর সুতার কোনের লোমশতায় এই উল্লেখযোগ্য হ্রাস সুতার মানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
একই গবেষণায় আরেকটি মিশ্রণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের তুলার সঙ্গে মেশানো হয় তুরস্কের তুলা। যুক্তরাষ্ট্রের তুলার বিপরীতে তুরস্কের তুলা শ্রমিকদের মাধ্যমে উৎপাদন ও বীজ থেকে আলাদা করা হয়। দুই ধরনের তুলার মিশ্রণে বোনা ও সুতাকাটা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের তুলার অনুপাত বাড়ানো হয়েছে যথাক্রমে ১৮.২% থেকে ২৯.৫% এবং সেখান থেকে ৪০.৯%।
উপরের ছকে দেখা যায়, কাটা সুতার চেয়ে বোনা সুতার ভারসাম্যপূর্ণতা কিছুটা ভালো ছিল। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের তুলার অনুপাত বাড়ানোয় কাটা সুতায় লোমশতার উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলার অনুপাত ১৮.২% থেকে ২৯.৫% করায় কাটা সুতায় লোমশতা ৭.৬৫ থেকে কমে হয়েছে ৭.৫ (উন্নতি হয়েছে ১.৯৬%)। আবার যুক্তরাষ্ট্রের তুলার অনুপাত ২৯.৫% থেকে ৪০.৯% করায় কাটা সুতায় লোমশতা ৭.৫ থেকে কমে হয়েছে ৬.৮ (উন্নতি হয়েছে ৯.৩%)। নিচের লেখচিত্রে বিষয়টি দেখানো হয়েছে:
আরেকটি গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের তুলার সঙ্গে মেশানো হয় ভারতীয় তুলা। ভারতে এই গবেষণা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের তুলার বিপরীতে ভারতীয় তুলা শ্রমিকদের মাধ্যমে তোলা এবং ‘রোলার’ যন্ত্রে বীজ থেকে আলাদা করা হয়। মিশ্রণে যুক্তরাষ্ট্রের তুলার অনুপাত নেওয়া হয়েছে যথাক্রমে ১৮% থেকে ৩৪% এবং সেখান থেকে ৫১%। ১৮% থেকে ৩৪% এ অনুপাত বাড়ানোয় সুতার লোমশতায় কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। কিন্তু অনুপাত ৩৪% থেকে ৫১% করায় লোমশতার উন্নতি হয় ৫.৩%। ১৮% এ লোমশতার মান ছিল ৭.৫, যা ৩৪% একই অর্থাৎ ৭.৫ই থাকে। কিন্তু ৫১% অনুপাতে এটি কমে হয় ৭.১।
ভারতে চালানো আরেকটি গবেষণায় ১০০% যুক্তরাষ্ট্রের তুলা এবং ১০০% ভারতীয় তুলায় বোনা কাপড়ে (নিট) ডাই ও রঙের মিলের পরিবর্তন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। নিচে সুতার বৈশিষ্ট্যের ছকে দেখা যায়, ভারতীয় তুলার লোমশতার (৭.২৪) চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তুলার লোমশতা (৭.১৪)- ১.৩৮% কম।
যুক্তরাষ্ট্রের তুলার তৈরি সুতার সীমিত লোমশতা কাপড়ের লোমশতা ও গুটি ওঠা কমায়। এছাড়া, কাপড়ের ওপরের সীমিত লোমশতার কারণে লাইট বক্স ও স্পেকটোফটোমিটার দিয়ে পরীক্ষায় অসম্পন্ন ও ডাইকৃত কাপড়ে উচ্চ প্রতিবিম্বন ক্ষমতা এবং কাপড়ে রঙের উজ্জ্বলতা প্রদর্শনের ক্ষমতা বেশি দেখা যায়।
এসব ফলাফল কাপড়ের নান্দনিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে লোমশতার সম্পর্কের বিষয়টি দেখায়। আর এসব ফলাফল অনুযায়ী, সীমিত লোমশতা, আরও ভালো প্রতিবিম্বন ক্ষমতা ও রঙের ভালো উজ্জ্বলতা দেখানোর ক্ষমতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের তুলার সুতায় তৈরি কাপড় আরও মসৃণ ও রুচিসম্মত হয়।