কন্টেন্ট এড়িয়ে যাও

উচ্ছিষ্ট আঁশের প্রভাব সম্পর্কে জানুন

ছড়ানো ও পরিস্কারের সময় উচ্ছিষ্ট আাঁশছড়ানো ও পরিস্কারের সময় উচ্ছিষ্ট আাঁশকলকারখানা ও উৎপাদনকারীদের সামনে সব সময়ই একটা চ্যালেঞ্জ হাজির করে চলেছে উচ্ছিষ্ট আঁশ। এই নিবন্ধে ড. ইয়াহিয়া এলমোগাজি উৎপাদন প্রক্রিয়ার ওপরে উচ্ছিষ্ট আঁশের প্রভাব সম্পর্কে সচরাচর যেসব প্রশ্ন ওঠে তার উত্তর দিয়েছেন। এর কারণগুলো কী কী? আমার ব্যবসার ক্ষেত্রে উচ্ছিষ্ট আঁশের ক্ষতি কতটা? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজুন এবং আরও বেশি জানুন।

দায় অস্বীকার: তুলার উচ্ছিষ্ট আশ ও বীজাবরণের খণ্ডাংশ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের বেশ কয়েকজন সুতা উৎপাদনকারী যেসব প্রশ্ন করেছেন তার জবাব দেওয়া হয়েছে এই নিবন্ধে। নিবন্ধের বিষয়বস্তু ও সুপারিশমালার বিষয়ে দায়দায়িত্ব একান্তই লেখকের নিজস্ব। এই বিষয়ের ওপরে বাড়তি কোনো প্রশ্ন থাকলে তাকে স্বাগত জানান লেখক। তিনি সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে খুশি হবেন। আপনার প্রশ্ন সরাসরি পাঠিয়ে দিন লেখকের কাছে এই ইমেইল ঠিকানায়: yelmogahzy@gmail.com


প্রশ্ন ১: উচ্ছিষ্ট আঁশ , বীজাবরণযুক্ত আঁশ এবং অরঞ্জিত অংশ কী? আর কী কারণেই বা এগুলো হয়?
উচ্ছিষ্ট আঁশ, বীজাবরণ যুক্ত উচ্ছিষ্ট আঁশ এবং অরঞ্জিত অংশ এগুলোর সবই হচ্ছে জড়িয়ে যাওয়া এবং গিঁটবাধা আঁশ যা জমি থেকে তুলা সংগ্রহের সময় বা বীজ ছড়ানোর প্রক্রিয়ার সময় ঘটে যায়। উচ্ছিষ্ট আঁশের ওপরে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ৫ থেকে ২০টি সুতা একসঙ্গে জটবাধার ফলে একটি একক উচ্ছিষ্ট আঁশ তৈরি হয়। তুলার একটা গাঁটে নিম্নেবর্ণিত ধরনের উচ্ছিষ্ট আঁশ দেখা যেতে পারে।

  • খাঁটি উচ্ছিষ্ট আঁশ (বা যান্ত্রিক উচ্ছিষ্ট আঁশ): শুধুমাত্র কয়েকটি আঁশ একসঙ্গে জটবেধে এ ধরনের উচ্ছিষ্ট আঁশ তৈরি হয়। এ ধরনের উচ্ছিষ্ট আঁশ সচরাচরই দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় যেসব ধরনের উচ্ছিষ্ট আঁশ দেখা যায়, তার বেশির ভাগই এই ধরনের। তুলা সংগ্রহের সময় যান্ত্রিকভাবে এ ধরনের উচ্ছিষ্ট আঁশ তৈরি হয়ে যায়। আবার বীজ ছড়ানোর পর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঁশ পরিস্কারের প্রক্রিয়ার সময়ও সেটা ঘটে।
  • জৈব উচ্ছিষ্ট আঁশ: এগুলো হচ্ছে মারাত্মক ধরনের উচ্ছিষ্ট আঁশ। এতে থাকতে পারে একগুচ্ছ অপরিণত আঁশ বা আঁশ নয় এমন উপাদানের (যেমন, বীজাবরণের খণ্ডাংশ, পাতা বা গাছের কাণ্ড) সঙ্গে জটবাধা আঁশ। এটা্ও যান্ত্রিক কারণে ঘটতে পারে। বীজ ছড়ানোর প্রক্রিয়ার আগে বীজযুক্ত তুলা পরিস্কারের সময় বা বীজ ছড়ানোর প্রক্রিয়ার সময় বীজ নষ্ট হওয়ার কারণে তা হতে পারে।

খাঁটি উচ্ছিষ্ট আঁশে (বা যান্ত্রিক উচ্ছিষ্ট আঁশ) সাধারণত লম্বা ও মিহি আঁশ থাকে। লম্বা ও মিহি আঁশ সাধারণত অধিকতর নমনীয় হয়ে থাকে। আর ছোট ও মোট আঁশের তুলনায় লম্বা ও মিহি আঁশের পাকিয়ে যাওয়া ও জটবেধে যা্ওয়ার প্রবণতা বেশ থাকে। হালকা গাঢ় খাঁটি উচ্ছিষ্ট আঁশ পেঁজা করার সময় সোজা করে নেওয়া যেতে পারে, বিশেষ কর যখন শ্লথ গতিতে কাজটা করা হয় তখন। কিন্তু এই খাঁটি উচ্ছিষ্ট আঁশের তুলনায় জৈবিক উচ্ছিষ্ট আঁশ খুবই মারাত্মক ধরনের। কারণ, এগুলোর জটবাধা ছাড়ানোর কাজটা অধিকতর কঠিন। আর সুতা কাটার প্রস্তুতির সময় এগুলো ক্রমশ ছোট ছোট খণ্ডের উচ্ছিষ্ট আঁশে পরিণত হওয়ার প্রবণতা থাকে।


প্রশ্ন ২: এমন কোনো তুলার গাঁট কী আছে যা কোনো উচ্ছিষ্ট আঁশ থাকবে না?

তুলার সকল গাঁটেই উচ্ছিষ্ট আঁশ থাকবে, তা সে হাতে সংগৃহীত তুলা, যান্ত্রিকভাবে সংগৃহীত তুলা, বীজের করাত বাছাই বা বেলন বাছাই হোক না কেন। এর কারণটা হচ্ছে, তুলার বীজ বাছাই এবং তুলা পরিস্কার করা জন্য যেসব যন্ত্রপাতি লাগে সেগুলো অবধারিতভাবেই কিছু না কিছু আঁশকে জটবদ্ধ করে ফেলবে। তাই কমবেশি উচ্ছিষ্ট আঁশ সৃষ্টি হবেই। সুতা উৎপাদনে ব্যবহৃত পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে একেকটি গাঁটে একেক পরিমানে উচ্ছিষ্ট থাকবে। হাতে সংগৃহীত তুলায় যান্ত্রিকভাবে সংগৃহীত তুলার চেয়ে পরিমাণে কম উচ্ছিষ্ট আঁশ থাকবে। বাছাইহীনভাবে সংগৃহীত তুলায় বাছাইকৃতভাবে সংগৃহীত তুলার চেয়ে হালকা বেশি পরিমানে উচ্ছিষ্ট আঁশ থাকবে। কারণ এ ক্ষেত্রে অধিকতর বেশি পরিস্কার করার দরকার পড়ে। আর করাত বাছাই প্রক্রিয়ায় বীজ ছড়ানো তুলায় বেলন বাছাই প্রক্রিয়ায় বীজ ছড়ানো তুলার চেয়ে বেশি উচ্ছিষ্ট আঁশ থাকবে। অতএব, তুলার গাঁটে উচ্ছিষ্ট আঁশ থাকবে, এটা অবধারিত। সবচেয়ে উত্তম দৃশ্যটা হচ্ছে, একটা তুলার গাঁটে প্রতি গ্রামে ১০০ থেকে ২০০টি খাঁটি উচ্ছিষ্ট আঁশ থাকবে। সারা বিশ্বে যত তুলা উৎপাদিত হয় তার মধ্যে ৮ শতাংশেরও কম তুলার ক্ষেত্রে এটা দেখা যায়। একটা গাঁটে গ্রহনযোগ্য উচ্ছিষ্ট আঁশের পরিমান হচ্ছে গড়ে ২০০ থেকে ৩৫০ উচ্ছিষ্ট আঁশ/গ্রা.। ৩৫০ থেকে ৫০০ উচ্ছিষ্ট আঁশ/গ্রা. হলে সেটা অতি উচ্চ মাত্রায় পড়ে। বীজাবরণ যুক্ত উচ্ছিষ্ট আঁশের ক্ষেত্রে প্রতি গ্রামে সর্বাধিক ১০টি উচ্ছিষ্ট আঁশ থাকলে সেটা উত্তম বিবেচনা করা হয়। ১১ থেকে ২০টি হলে নিম্ন মাত্রা, ২১ থেকে ৩০টি মধ্যম মাত্রা, ৩১ থেকে ৪৫টি হলে উচ্চ মাত্রা এবং ৪৬ বা ততোধিক হলে অতি উচ্চ মাত্রা ধরা হয়।


প্রশ্ন ৩: সুতা কাটার সময় উচ্ছিষ্ট আঁশের প্রভাব কীভাবে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি?

সুতা কাটার সময় প্রক্রিয়াকরণের চারটি ধাপ রয়েছে, যেখানে উচ্ছিষ্ট আঁশের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে:

(ক)তুলা মেশানো (খ) ছড়ানো এবং পরিস্কার করা (গ) ধুনাই করা এবং (ঘ) চিরুনি করার প্রক্রিয়া।

তুলার মিশ্রণে উচ্ছিষ্ট আঁশ

তুলার মিশ্রণে উচ্ছিষ্ট পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে সেসব তুলার গাঁট কেনা যাতে প্রতি গ্রামে উচ্ছিষ্ট আঁশের পরিমান ৪০০টির বেশি নয় বা প্রতি গ্রামে বীজাবরণযুক্ত উচ্ছিষ্ট আঁশের পরিমাণ ৩৫টির বেশি নয়। যদি এসব গাঁটের মধ্যে কিছু সরক্ষণাগারে পাওয়া যায়, তাহেলে সেগুলোকে পৃথকভাবে অপেক্ষাকৃত ধীর গতিতে প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে অনেকগুলো তুলার মিশ্রণের মধ্যে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে। যে তুলায় পরিপক্কতার অনুপাত বেশি, সেই তুলা কেনার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অপরিপক্ক তুলার আঁশের কারণে জৈব উচ্ছিষ্ট আঁশ তৈরি হতে পারে যা প্রক্রিয়াকরণের সময় অপসারণ করা অসম্ভব না হলেও অত্যন্ত কঠিন। সাধারণত, ৩.৮ মাত্র্রার চেয়ে বেশি মাইক্রোনিয়ার মানের আঁশগুলো অত্যন্ত পরিপক্ক হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলার ৮০ শতাংশেরও বেশি এই মাত্রার মধ্যে পড়ে।

সুতা কাটার কারখানায় ভিন্ন ধরনের সুতা কাটার পদ্ধতি ও ভিন্ন ধরনের প্রস্তুত প্রণালী থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে অবস্থা বুঝে উচ্চমাত্রার উচ্ছিষ্ট আঁশ সংবলিত তুলার গাঁটগুলো ব্যবহার করতে হবে মধ্যম-মানের ধুনাই রিং সুতার জন্য বা উন্মুক্ত-প্রান্ত সুতা তৈরির জন্য। যখন মিহিভাবে আঁচড়ানো সুতা তৈরি করা হয়, তখন তুলার গাঁটে অধিকতর কম উচ্ছিষ্ট আঁশ থাকলে অধিকতর কম বর্জ্য ও চিরুনি প্রক্রিয়ায় কম উচ্ছিষ্ট উৎপন্ন হবে। বায়ু প্রবাহের মাধ্যমে সুতা কাটার ক্ষেত্রে উচ্ছিষ্ট আঁশের বিষয়টি আরও মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্র অধিকতর সতর্কতার সঙ্গে তুলার গাঁট কেনার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ছড়ানো ও পরিস্কারের সময় উচ্ছিষ্ট আাঁশ

ছড়ানো ও পরিস্কার করা প্রক্রিয়ায় সব সময়ই তুলার উচ্ছিষ্ট আঁশ যুক্ত হয়। এটা সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু সুতা কাটার সঙ্গে যুক্ত কারখানাগুলোকে এটা জানা দরকার যে তুলার মিশ্রণে উচ্ছিষ্ট আঁশের পরিমাণ যতটা বেশি হবে, ছড়ানো ও পরিস্কারের প্রক্রিয়ায় উচ্ছিষ্ট আঁশ যুক্ত হ্ওয়ার হার তত কমবে। এটা অত্যন্ত লম্বা একটা বিষয় যা আমি সুতা কাটার স্বতন্ত্র কারখানাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে পারলে গর্বিত হব। এখানে পয়েন্টটা হচ্ছে, ছড়ানো ও পরিস্কার করার প্রক্রিয়াটা এখানে সাধারণত অপেক্ষাকৃত কম উচ্ছিষ্ট আঁশ সংবলিত তুলার মিশ্রণের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি উচ্ছিষ্ট আঁশ সংবলিত তুলার মিশ্রণের প্রতি উদার। যন্ত্রের চুট ফিডে উচ্ছিষ্ট আঁশের পরিমাণ সময়ে সময়ে মেপে নেওয়ার বিষয়টি যুক্তিযুক্ত। ছড়ানো ও পরিস্কারের সময় ঠিক কী পরিমাণে উচ্ছিষ্ট আঁশ যুক্ত হচ্ছে, তা এর মাধ্যমে বুঝে নেওয়া যাবে।

ধুনাই করার প্রক্রিয়ায় উচ্ছিষ্ট আঁশ

ধুনাই করার প্রক্রিয়ায় সব সময়ই উচ্ছিষ্ট আঁশের পরিমাণ হ্রাস পাবে। এর কারণটা হচ্ছে উচ্ছিষ্ট আঁশ হয় ধুনাই করার সময় অপসারিত হবে, তা না হলে ধুনাই করার স্থানে গিয়ে সোজা হয়ে যাবে। নিম্নেবর্ণিত ফর্মূলা ব্যবহার করে ধুনাই করার সময় উচ্ছিষ্ট আঁশ অপসারণের কার্যক্ষমতা বুঝে নেওয়া যায়। [১০০ ×(চুট-ফিডে থাকা উচ্ছিষ্ট আঁশ –ধুনাই করার বেলনে থাকা উচ্ছিষ্ট আঁশ)/চুট ফিডে থাকা উচ্ছিষ্ট আঁশ]। উচ্ছিষ্ট আঁশ অপসারণের কার্যক্ষমতা যতটা বেশি হবে, ধুনাই করার বেলন ততটাই কম উচ্ছিষ্ট আঁশ থাকবে। সুতা কাটার কারখানাগুলোকে যেটা জানতে হবে সেটা হচ্ছে চুট ফিডে উচ্ছিষ্ট আঁশের পরিমাণ যতটা বেশি হবে, উচ্ছিষ্ট আঁশ অপসারণের কার্যক্ষমতা ততটাই কম হবে। সুতা কাটার কারখানাগুলো সময়ে সময়ে চুট ফিডে ও ধুনাই করার বেলনে উচ্ছিষ্ট আঁশের পরিমান মেপে নেবে, এটাই যুক্তিযুক্ত। এতে করে উচ্ছিষ্ট আঁশ অপসারণের কার্যক্ষমতা বুঝে নেওয়া যাবে। পাশাপাশি ধুনাই যন্ত্রের সকল কার্ডের ক্ষেত্রের এই পরিমাপটা করার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একই লাইনে থাকা একেকটি কার্ডের উচ্ছিষ্ট আঁশ অপসারণের কার্যক্ষমতা একেক রকম হতে পারে। কার্ড মেশিনের তারের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থার কারণে সেটা ঘটতে পারে। দুটি কার্ডের উচ্ছিষ্ট আঁশ অপসারণের কার্যক্ষমতায় যদি বিস্তর ফাঁরাক পরিলক্ষিত হয়, তাহলে অধিকতরভাবে কার্ড রক্ষণাবেক্ষণের দরকার পড়বে। এটাও উল্লেখ করা দরকার যে ধুনাই করার গতি যতটা বেশি হবে, উচ্ছিষ্ট আঁশ অপসারনের কার্যক্ষমতা ততই কম হবে। এর অর্থ হচ্ছে উচ্ছিষ্ট আঁশ অপসারেণের আকাঙ্খার সঙ্গে ধুনাই করার মেশিনের গতি সামঞ্জস্য করে নিতে হবে।

চিরুনি করার প্রক্রিয়ায় উচ্ছিষ্ট আঁশ

চিরুনি করার প্রক্রিয়ায়্ও সব সময় উচ্ছিষ্ট আঁশ অপসারিত হবে। চিরুনি করার প্রক্রিয়ায় উচ্ছিষ্ট আঁশ অপসারণের কার্যক্ষমতা বুঝে নেওয়া যাবে নিম্নেবর্ণিত ফর্মূলা ব্যবহার করে [১০০×( ধুনাই করার বেলনে থাকা উচ্ছিষ্ট আঁশ – চিরুন করার বেলনে থাকা উচ্ছিষ্ট আাঁশ)/ধৃনাইকৃত বেলনে থাকা উচ্ছিষ্ট আঁশ]। চিরুনি প্রক্রিয়ার উচ্ছিষ্ট কত শতাংশ ব্যবহৃত হবে, তার ওপর ভিত্তি করে চিরুনি প্রক্রিয়ায় উচ্ছিষ্ট আঁশ অপসারণের কার্যক্ষমতা ৮০ শতাংশ্ও ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে ধু্নাই করার বেলনে উচ্ছিষ্ট আঁশের পরিমান কম হলে চিরুনি প্রক্রিয়ার উচ্ছিষ্টের পরিমান্ও কম হবে। এটা হতে পারে সুতা উৎপাদনকারী কারখানাগুলোর জন্য খরচ বাচানোর বড় একটা উপায়।


প্রশ্ন ৪: আমাদের সুতায় তৈরি কাপড়ে অরঞ্জিত অংশ ও অরঞ্জিত দাগের বিষয়ে প্রায়ই অভিযোগ পাই। এ ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণ কী?

এ ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতির প্রায় ৮০ শতাংশই ঘটে থাকে জৈব উচ্ছিষ আঁশ বা অরঞ্জিত অংশের কারণে, যা রং করা ও পূর্ণতা দেওয়ার প্রক্রিয়ার সময় ঠিকমতো রঞ্জিত হয় না। অবশ্য, বয়ন প্রক্রিয়ার সময় ভেজাল আঁশের উপস্থিতির কারনেও এ ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটতে পারে। কারণের বিষয়ে একটা উপসংহারে পৌঁছানোর আগেই কাপড়ে এই ত্রুটি-বিচ্যুতির কারনটা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নির্ণয় করার বিষয়টা সুতার কারখানাগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমার কোম্পানিতে এ ধরনের নির্ণণয়মূলক পরীক্ষাগুলো রুটিনমাফিকই করে থাকি। আার এই সমস্যাটা সুতা কাটার প্রক্রিয়াতেও ঘটতে পারে, আবার বয়নের সময়ও তা ঘটতে পারে।


প্রশ্ন ৫: উচ্ছিষ্ট আঁশ ও বীজাবরণযুক্ত উচ্ছিষ্ট আঁশের জন্য কেমন মূল্য দিতে হতে পারে?

সুতার ওপরে উচ্ছিষ্ট আঁশের প্রভাবের মূল্য দ্বিমুখী: (১) সুতা উৎপাদনের আগেই বেশির ভাগ উচ্ছিষ্ট আঁশ অবশ্যই অপসারণ করতে হবে। (২) থেকে যা্ওয়া উচ্ছিষ্ট আঁশের কারণে সুতার চেহারা খারাপ হয়ে যেতে পারে এবং সুতার মূল্যমান কমে যেতে পারে। সুতা উৎপাদনের ক্ষেত্রে উচ্ছিষ্ট আঁশ অপসারণের বিষয়টি একটি বাড়তি ব্যয়ের বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ এটা করতে কার্ডিং মেশিনে ঘন ঘন তার বসানো লাগতে পারে অথবা চিরুনি করার সময় অধিকতর বেশি চিরুনি প্রক্রিয়ার উচ্ছিষ্ট তৈরি হতে পারে। যে কারখানায় বছরে এক লাখ গাঁট থেকে চিরুনি করা রিং সুতা তৈরি হয়, সেখানে ১ থেকে ২ শতাংশ কম চিরুনি প্রক্রিয়ার উচ্ছিষ্ট উৎপন্ন হওয়া মানেই বছরে এক মিলিয়ন ডলারের মতো সাশ্রয়। থেকে যাওয়া উচ্ছিষ্ট আঁশ ধুনাইকৃত সুতায় প্রতি গ্রামে ৩০টি বা তার কম হতে পারে। আর চিরুনি করা সুতায় প্রতি গ্রামে ৮ থেকে ১০টি উচ্ছিষ্ট আঁশ থাকতে পারে। এই মূল্যমানটা এভাবে বলা যেতে পার- ধুনাইকৃত সুতায় প্র্রতি ১ হাজার মিটারে সর্বোচ্চ ৩ হাজার উচ্ছিষ্ট আঁশ এবং চিরুনি করা সুতায় প্রতি ১ হাজার মিটারে ৪০০টি উচ্ছিষ্টি আঁশ(অপেক্ষাকৃত মিহি সুতায় প্রতি হাজারে বেশি উচ্ছিষ্ট আঁশ থাকবে)। অধিকতর বড় আকৃতির উচ্ছিষ্ট আঁশ (> ২ হাজার µm) যা সুতার ভেতরে টিকে থাকে, সেগুলোর ফলে সুতার চেহারা খারাপ হয়ে যেতে পারে। সেগুলো এমনকি চূড়ান্তভাবে তৈরি কাপড়েও অরঞ্জিত গাঢ় বিন্দু বিন্দু (অরঞ্জিত অংশ) হিসেবে দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে মৃত বা অপরিপক্ক সুতা থাকলে সেটা দৃশ্যমান হয়।