ফ্যাশনের ভবিষ্যত এখানে
আমি সাম্প্রতিক বাণিজ্যিক প্রদর্শনীগুলোতে যা দেখেছি তার ভিত্তিতে বলা যায়, এখন যেটা খুবই সম্ভব সেটা হচ্ছে ফ্যাশনটা সত্যিকার অর্থেই উৎসাহব্যঞ্জক। ফ্যাশন সেক্টর নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো এবং অনুসন্ধান-গবেষণা চালানোর এ্কটা কেন্দ্র্রস্থল পেতে এটা প্রবলভাবে শক্তি সঞ্চয় করে দিচ্ছে। আমি সেসব আন্তর্জাতিক পণ্য, উপকরণ ও সেবার সুবিন্যস্ত পরিধি দেখে রোমাঞ্চিত, যেগুলো ফ্যাশন, ফাংশন ও নতুনত্বের সীমানাকে ধাক্কা দিচ্ছে। আমার বক্তব্যের আলোকপাতগুলো পেতে এই নিবন্ধ পড়তে থাকুন।
অভিনব প্রযুক্তিসমুহ
ভবিষ্যৎটা যে ইতিমধ্যে এখানে হাজির, সে বিষয়টা আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য রোবটের মানবমূতির মতো আর কিছু নেই। ইউভেকার রোবট মানবমূর্তি এমনিও হচ্ছে এমন উপযুক্ত একটা জিনিসের পরবর্তী বিবর্তন। অনুকরণে পটু এই মানবমূর্তির সঙ্গে একট সাদামাটা ওস্বজ্ঞাত সফটওয়্যার যুক্ত করে দিয়েছে ই্উভেকা। এর ফলে প্রারম্ভিক ডিজাইন প্রক্রিয়ায় যে স্কেচের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন করতে হতো, সেই প্রক্রিয়াটা এখন সহজতর হয়ে গেছে। পণ্যের অবিকল আরেকটা তৈরির কাজটা অধিকতর কার্যকরভাবে করার জন্যই এই উদ্যোগ। এর ফলে একটা সহজ ক্লিকেই কাঠামোটাকে তার আকৃতি বদলাতে নির্দেশনা দেবে। এটাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, অথবা অঞ্চলের ভিত্তিতেও করা যাবে। এর ফলে প্রান্তিক ব্যবহারকারীর সুনির্দিষ্ট দেহ অনুপাতের ভিত্তিতে মানবমূর্তিটা নিখুঁতভাবে কাজ করে দেবে।
এমিনিও কেবল পণ্যের উৎকর্ষতা সাধনের প্রক্রিয়াটাতেই উন্নতি ঘটায়নি। এটা সংশ্লিষ্ট পণ্যটাকেই উন্নত করে দিয়েছে। ডিজাইনাররা এখন এ থেকে ই পর্যন্ত আকৃতির পোশাক তৈরির কাজ স্বাচ্ছন্দের সঙ্গে করতে পারে। এটা আমাদের এই বিষয়টাই মনে করিয়ে দেয় যে দুরদর্শিতা ও নতুনত্বের মতো বিয়ষগুলো আমাদের শিল্পটাকে অধিকতর অন্তর্ভূক্তিমুলক বানিয়ে দিতে পারে।
আরেক অভিনবত্ব যা ভোক্তার অভিজ্ঞতায় উন্নতি ঘটিয়েছে, সেটি হচ্ছে ভারিসিয়ামের গ্রাহক সম্পৃক্ততা ও পণ্য প্রমাণীকরণের বি২সি প্ল্যাটফরম যা বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলোর জন্য। ভারিসিয়াম পোশাকের ভেতরে একটি এনএফসি চিপ লাগিয়ে দেয় এবং নকলের হাত থেকে সুরক্ষিত করতে প্রতিটি পণ্য ব্লকচেইনে নিবন্ধন করে নেয়। এটা কেবলই ব্র্যান্ডগুলোকে তাদের আইপি সুরক্ষিত করতে এবং পণ্যের নকল তৈরি ও বিক্রি এড়া্তেই সাহায্য করে না। এর ফলে সঠিক সময়ে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার একটা নতুন পথও বাতলে্ দেয়। ব্র্যান্ডকৃত কনটেন্টকে সহজেই হালনাগাদ করে নেওয়া যেতে পারে এবং তা এনএফসি চিপের দিকে এগিয়ে নেওয়া যাবে। পরিণামে সেই পণ্যটা নিজেই ব্র্যান্ডের গ্রাহক সম্পৃক্ততার একটা পোর্টালে পরিণত হয়ে যাবে।
স্মার্ট উপকরণ
চলার পথে প্রচুর পরিমাণে নিত্যনতুন স্মার্ট উপকরণ সমাধান রয়েছে। কিন্তু দুটো অত্যন্তভাব আমার নজর কেড়েছে: ইকোটেক এবং পাইরেটস। উভয়ই ‘স্মার্ট’ শব্দটির সংজ্ঞাটাকে সম্প্রসারিত করেছে। ডিজাইনার ও ভোক্তা হিসেবে আমরা যেভাবে পরিবেশকে বুঝি, সে বিষয়ে আামাদেরকে ভিন্নভাবে চিন্তা করার জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।
ইকোটেক ভোক্তার ব্যবহার-পূর্ববতী বিভিন্ন খণ্ডাংশ, যেমন বয়ন ও বুনন কোম্পানিগুলোর উৎপাদন বর্জ্যকে নতুন ও সুন্দর সুতায় রূপান্তরিত করে থাকে। ইকোটেকের সুতা কেবল খরচ সাশ্রয়ই করে না। তারা পরিবেশগত প্রভাবও কমিয়ে আনছে। একই ধরনের যেসব পণ্য বিশুদ্ধ উপকরণ দিয়ে তৈরি হচ্ছে, তার সঙ্গে তূলনা করা যাক। দেখা যাচ্ছে, ইকোটেকের এলসিএ (জীবনচক্র মূল্যায়ন, যা আইসিইএ-এর মাধ্যমে প্রত্যায়িত) বিদ্যমান অবস্থাকে ছাড়িয়ে গেছে:
- গ্রিনহাউস প্রভাব ৫৬ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস
- জ্বালানি সাশ্রয় ৫৬.৩শতাংশ পর্যন্ত
- পুরো প্রক্রিয়াজুড়ে পানি ব্যবহারে ৭৭.০ শতাংশ পর্যন্ত সাশ্রয়
পাইরেটসও বস্তুগত উদ্ভাবন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে সংযোগ অন্বেষণে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের পাইরেটেক্স® বস্ত্রগুলোকে আমাদের চারপাশের বিষাক্ত দূষণের বিরুদ্ধে একটা বর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এই পণ্য গ্রাহকদের নিজেদের জন্য নিজেই অধিকতর যত্ন নেওয়ার সক্ষমতা তৈরি করে দেয়। প্রসাধন ও স্বাস্থ্যগত ব্যবহার, উভয়ের জন্য পাইরেটেক্স পা্ওয়া যায়। এটা এ্ন্টি-অক্সিডেন্ট, প্রোটিন, এবং এমিনো এসিডের ‘ককটেইল’ সঞ্চার করানোর মাধ্যমে বিষ নিষ্ক্রিয় করে, আদ্রতা এনে দেয় এবং ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে (প্রসাধনের ক্ষেত্রে), এবং দেহে প্র্রশান্তি এনে দেয় এবং রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে জোরালো করে (স্বাস্থ্যগত ক্ষেত্রে)। এই ক্ষেত্রে, স্মার্ট উপকরণগুলো পরিবেশগত বিপত্তিগুলোর বিষয়ে ভোক্তাদের সচেতন হতেও সাহায্য করে এবং সেগুলোর সুরক্ষিত করার একটা পথ বাতলে দেয়।
অভিনবত্ব সংশ্লিষ্ট সম্পদগুলো
সর্বাধুনিক পণ্য ও উপকরণ বাজারে আনার পাশাপাশি, কোম্পানিগুলো উৎসাহিত করছে এক সহযোগিতামুলক বাস্তুতন্ত্র- বিশ্বজুড়ে অভিনবত্বের ক্ষেত্রে নতুন সক্ষমতা গঠন।
ফ্রান্সভিত্তিক আপটেক্স হচ্ছে একটি প্রতিযোগিতামূলক জোট যা বস্ত্র শিল্পের সকল ক্ষেত্রের ১৮০ জন বিশেষজ্ঞ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত। এই জোটের মিশন হচ্ছে বস্ত্রখাতে অভিনবত্ব আনার পথে তার সদস্যদের সহযোগিতা করা। আপটেক্স কোম্পানিগুলো ও সংস্থাগুলোকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত করতে কাজ করছে। এর মা্ধ্যমে এই জোট কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা এবং অভিনবত্ব আনতে সহযোগিতার ক্ষেত্রে তৈরি করে যাচ্ছে।পরিণামে এসব কোম্পানি তাদের আঙিনাকে বিনিয়োগ ও নতুনত্বের একটা মূখ্য স্থান হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে।
মিলানের সি.এল.এ.এস.এস (ক্রিয়েটিভিটি লাইফস্টাইল অ্যান্ড সাসটেইনেবল সিনার্জি) হচ্ছে স্মার্ট উপকরণে অভিনবত্ব আনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পা্ওয়ার একটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্ল্যাটফরমে যুক্ত হওয়ার জন্য চার ধরনের উপায় দিয়ে থাকে: পরামর্শ সেবা, উপকরণের এক কারখানায় প্রবেশাধিকার, শিক্ষামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি এবং ই-কর্মাস সেবা। তরুণ যেসব ডিজাইনার ব্যবসার জন্য মাল-মসলা খুঁজছেন, তারা হয়তো ই-কমার্সটার প্রশংসা করবেন। যেখানে যতটা বেশি ডিজিটাল সমাধান রয়েছে, সেখানে অধিকতর স্মার্ট ব্যবসা, নতুন ব্যবসার জন্য কাজটা সহজতর হবে। আর শিক্ষার্থীদের জন্য উপকরণগত অভিনবত্বে সেরাটা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
ধারণাগত ডিজাইন
ভবিষ্যত নিয়ে স্বপ্ন দেখা এবং প্রগতির পথে কাজ কর এমন বাস্তবতাগুলো বিবেচনা করার সুযোগটা সব সময়ই আছে। সমাজ, দেহ এবং কার্যক্ষমতার মধ্যে সংযোগের বিষয়টি পুনর্কল্পনা করতে আজকের ডিজাইনাররা ভবিষ্যৎমুখী বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করছেন। অনেক ডিজাইনার আমরা যা পরিধান করি এবং যেভাবে তা পরিধান করি, তার সুনিদিষ্ট একটা নমুনা তুলে ধরতে নমনীয় স্টোন প্লেটিং ও মাসকিন (মাশরুম লেদার) থেকে শুরু করে কংক্রিটের ফিতা ও পোলসেন্সর ফলি (দৃশ্যত চৌম্বকীয় প্রতিক্রিয়াশীল পদার্থ) পর্যন্ত এমন সব উপকরণ উপকরণ ব্যবহার করছে।
অভিনবত্বের ভবিষ্যতটা কেবল নিত্যনতুন উপকরণ তৈরি, কারিগর সক্ষমতা গঠন এবং পণ্য তৈরির কাজেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। নতুন নতুন পরিবেশ, বৈশ্বিক বিভিন্ন প্ল্যাটফরম ও পণ্য সৃষ্টি এবং কার্যক্ষমতার প্রথাগত সংজ্ঞাগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে যেভাবে আমরা চিন্তা করি, সেই ক্ষেত্রটাকেও ধীরে ধীরে এটা বিবর্ধন করে দেবে। শিগগিরই আমরা তেখতে পাব যে শৈল্পিক অভিব্যক্তি, বোঝাপাড়া, এবং সহমর্মিতার মতো নিত্যনতুন বিবেচ্য বিষয়ুগলো কীভাবে আমাদের ফ্যাশন কাঠামোর একটা অংশ হয়ে যাচ্ছে।