কন্টেন্ট এড়িয়ে যাও

যে নায়ক কাপড় আমাদের প্রয়োজন: যুগ যুগ ধরে সুতি দক্ষ পরাশক্তি হিসেবে আছে।

শতবর্ষ ধরে একটি উপাদান অন্য সবকিছুকে হারিয়ে দিচ্ছে।

এক দশকের বেশি সময় পূর্বে একজন নকশার ছাত্র হিসেবে আমার মনে আছে, শিক্ষকরা আমাদের বলতেন, “ক্রীড়া পোশাকের জন্য সুতি ব্যবহারের ঝুঁকি নিবে না।” বার্তাটি ছিল স্পষ্ট: এটি দক্ষতার কাপড় ছিল না। এরপর কয়েক দশক বিভিন্ন ব্র্যান্ডে নকশাবিদ, ডেভেলপার ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করে আমি খুঁজে পেয়েছি সত্য এর উল্টো: তুলাই সত্যিকারের দক্ষতা উপাদান হিসেবে ছিল, এখনো বর্তমান। উল্লেখযোগ্য অভিযোজন ক্ষমতা ও দক্ষতা সুবিধার জন্যই শুধু নয়, পরিবেশবান্ধব হিসেবেও ঐতিহাসিকভাবে একে উচ্চতম স্থানে অবস্থান দেওয়া হয়। কাপড় শিল্পের সুতার জট ছাড়ানো কৌশলপূর্ণ হতে পারে কিন্তু নির্দিষ্ট আঁশ, কাপড় ও সম্পূর্ণতার বিবর্তন খুঁজে দেখলে এটি স্পষ্ট যে পুরো পথজুড়ে তুলাই হয়ে আছে আমাদের পরিবেশবান্ধব নায়ক।



আমরা শুরু করবো ১৫০০ সালে ফিরে গিয়ে, যখনকার মঞ্চে অথবা বলা যায় সমুদ্রে তুলাই ছিল পানিরোধী এক পরাশক্তি।ওই সময়ে ব্রিটেন ও স্কটল্যান্ডের নাবিকরা আবিষ্কার করেন তাদের তুলার কাপড়ে তৈরি পালে মাছের তেল ও গ্রিজ দিলে আর্দ্র আবহাওয়ায় সেটি হয় আরও কার্যক্ষম, আর শুকনো আবহাওয়ায় হয় হালকা। ভালো দক্ষতার পালগুলো ছিল অপরিশোধিত। তাই, শুরু হয় ধারাবাহিকভাবে নকশা ও উন্নয়ন যার ফলাফল হিসেবে পাই মোমকৃত সুতি বলে আমরা যেটি চিনি। সুতির মধ্যে প্যারাফিন ও প্রাকৃতিক মৌচাকের মোম দিয়ে এটি বানানো হয়।অবশেষে, নাবিকরা পরিবর্তিত পালের কাপড় দিয়ে হাতাকাটা কোটও বানায়। এমনকি ব্রিটিশ নৌবাহিনী মোমকৃত সুতি পাল ব্যবহৃত জাহাজ নিয়ে মিসরে যায় আরও তুলা কিনতে।



১৭০০-১৮০০ শতাব্দী জুড়ে জাহাজ শিল্প তুলার বাণিজ্যিক ব্যবহারে আধিপত্য বজায় রাখে এবং এই চিত্রে আবির্ভাব হয় বারবারের। ১৯৩০ এর শুরুর দিকে,দলের মোটরসাইকেল স্যুটের জন্য তারা মোমকৃত সুতি বেছে নেয়। ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক দল ১৯৩৬ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ওই পোশাক ব্যবহার করে। আর যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেতা স্টিভ ম্যাককুইনও বিখ্যাত হিসেবে এই পোশাক পরেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে যুক্তরাজ্যের সামরিক বাহিনীও মোমকৃত সুতির পোশাক পরেছিল। পোশাক শিল্পে বৃহৎ পরিসরে ব্যবহারের জন্য কাপড়টি সেখান থেকে বিবর্তিত হয়েছে। আর পোশাকশিল্প সুবিধা পায় এর সুরক্ষিত উষ্ণতার।


পরবর্তী তুলা পরাশক্তি: বিভিন্ন অবস্থা থেকে সুরক্ষা। সব পরিস্থিতিতে স্বস্তির জন্য তৈরি কয়েকটি কাপড় হলো গ্রেনফেল কাপড় (১৯২৩), বার্ড কাপড়, ও ভেন্টাইল। গ্রেনফেল কাপড়ের নামকরণ করা হয়েছে একজন ব্রিটিশ চিকিৎসক ধর্মযাজকের নামে। এই কাপড় তৈরি হয় প্রতি ইঞ্চিতে ৬০০ তুলার সুতার মাধ্যমে এবং এটি গ্রেনফেলের কর্মস্থল নিউফাউন্ডল্যান্ডের বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। গ্রেনফেল কাপড়ের মতোই বার্ড কাপড়ও নকশা করা হয়েছে কঠোর আবহাওয়া থেকে রক্ষার জন্য। রিচার্ড বার্ড ছিলেন মেরুর অভিযাত্রী এবং তিনি প্রয়োজন বোধ করেন এমন পানিরোধী কাপড় যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে। এর ফলে তাঁর শরীরের ঘাম যেন ত্বকে সঙ্গে জমে না গিয়ে, বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে পারে। মোমকৃত সুতির মতোই বার্ড কাপড়ও সেনাবাহিনীর উর্দিতে যাওয়ার মতো হয়। যার কারণ এটি শুকনো থাকতো, বাতাস চলাচল করতে পারতো। এছাড়া এটি ছিল মশা প্রতিরোধী এবং বোনা কাপড়ের চেয়ে হালকা। এখনো এটি শীতল আবহাওয়ার পোশাকে ব্যবহার হয়।


সবশেষে, আমরা বলবো পানিরোধী স্বতন্ত্র বুননের কাপড় ভেন্টাইলের কথা। ভেন্টাইল এমন এক তুলার কাপড় যা বোনা হয় অতিদীর্ঘ আঁশ (ইএলএস) দিয়ে। আর এটি পাওয়া যায় সারাবিশ্বে চাষকৃত তুলার মাত্র ২% থেকে। ইএলএস আঁশ থেকে শক্তিশালী সুতা তৈরি হয়, যা দিয়ে দৃঢ়ভাবে অত্যন্ত ঘন বুননের ১০০% সুতি কাপড় বোনা যায়। আর এই কাপড় বিরূপ আবহাওয়া থেকে কার্যকরভাবে রক্ষা করে। আবৃত ও বাতাস চলাচালের গুণের কারণে এই কাপড় প্রাকৃতিকভাবেই সারাদিনজুড়ে স্বস্তি দেয়। পাশাপাশি এটি টেকসই ও ব্যবহারে শব্দহীন। ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারের শিরলে ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা প্রথম এই কাপড় তৈরি করেন। তবে ভেন্টাইল এখন তৈরি করে শুধুমাত্র সুইজারল্যান্ডের স্টর্টজ অ্যান্ড কোং এজি। প্রতিষ্ঠানটি কাঁচামাল সুতা তৈরি, পাকানো, বুনন ও ধোয়ার কাজ করে এবং নিজস্ব ব্র্যান্ড ইটাপ্রুভ হিসেবে পোশাক উৎপাদনকারীদের কাছে সরাসরি বিক্রি করে ও বিশ্বব্যাপী পাইকারী বাজারজাত করে।


তুলার সবশেষ পরাশক্তিতে আলোকপাত হিসেবে আমাদের আছে ফক্সফাইবার, যা দক্ষতা ও পরিবেশবান্ধব উভয় বিষয়কেই যুক্ত করেছে। কাপড়ের ইতিহাসে এটিই আমার অন্যতম প্রিয় গল্প। ১৯৮০ সালে স্যালি ফক্স তৈরি করেন ফক্সফাইবার। সময়ের জন্য বিপ্লবী এই কাপড় ছিল প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে সুতা তৈরিতে সক্ষম রঙিন সুতি। দীর্ঘ সন্নিবেশে রঙিন সুতি তৈরির মাধ্যমে স্যালি ফক্স এই কাপড় তৈরিতে পূর্বের হাতে কাটা সুতার প্রক্রিয়ায় থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারে সাদাকরণ, বর্জ্য পানি ও শ্রমিকের খরচ কমিয়ে ফেলেন। প্রাকৃতিকভাবে রঙিন সুতির কাপড়ে তাঁর একক দক্ষতা বাজারে আনে সুন্দর, কোমল, পরিবেশবান্ধব সমাধান। তাঁর কয়েকটি বড় নামের ক্রেতারা হলো লিভাই’স, ল্যান্ড’স এন্ড ও এল.এল. বিন। প্রাকৃতিক ও জৈব বিষয়ক উৎসকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশবান্ধব ক্ষেত্রে এখনো শীর্ষ ভূমিকা পালন করছে।


আপনি হয়তো অবাক হতে পারেন, কেন স্মৃতির পথে এই পথচলা? এখানে এটিই বোঝানো হচ্ছে, ভাষা ও বিপণন ভোক্তার কাপড় পছন্দের পরিবর্তন ঘটাতে পারলেও, সুতি এখনো বহুমুখী ও দক্ষতাপূর্ণ। ইতিহাস আমাদের জানায়, ক্রীড়া পোশাকের আগে ছিল কাজের পোশাক। একে দক্ষ বলার আগে আমরা একে বলতাম প্রয়োজনীয় ও স্বস্তির সমাধান। আপনাকে যদি এটি শুকনো রাখে তাহলেই সেটি ছিল স্বস্তি। যদি সেটি শোষণ ক্ষমতার ও বাতাস চলাচলের উপযোগী হয়, তাহলেও সেটি ছিল স্বস্তির। যদি সেটি নরম, তবেও সেটি স্বস্তিদায়ক ছিল। সময়ের আবর্তে কৃত্রিম আঁশের জনপ্রিয়তার কারণে তুলার প্রাকৃতিক শক্তিকে খাটো করা হলেও, বর্তমানে এর পরিবর্তন হচ্ছে। কারণ ভোক্তারা জানে কোনটি ক্ষতিকর।


বর্তমানে, আমাদের সবারই উপলব্ধি হলো, আমাদের পোশাকের স্থানে সাধারণভাবে থাকা কৃত্রিম পোশাকগুলো আসলে সৃষ্টি করছে টন টন ক্ষুদ্র প্লাস্টিক দূষণ। এখন ভোক্তারা চান তাদের পোশাক পৃথিবী বাঁচাবে এবং দক্ষও হবে। এজন্য তারা কোনো আপসে রাজি নয়। আর এজন্য ধন্যবাদ দিতে হবে আঁশ, কাপড় ও সম্পূর্ণতার উন্নয়নকে। উল্লিখিত আলোচনার সবকিছুই তুলা দিতে পারে। বাড়তি সুবিধা হিসেবে পাওয়া যায় ক্ষুদ্র পরিবেশ সৃষ্টি, পেশী পুনর্জীবিত, আর্দ্রতা ব্যবস্থাপনা, স্থায়িত্ব, চাপ ও পূর্বাবস্থায় ফেরার বৃদ্ধি, দুগন্ধ/ক্ষুদ্র অনুজীব রোধী সুবিধা। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলো তুলা/উপাদানের আরঅ্যান্ডডিতে এসব বিষয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন।এসব বিষয়ই ঘটছে গুরুত্বের সঙ্গে পণ্যের জীবনচক্র মাথায় রেখে, যা সর্বোপরি সৃষ্টি করছে পরিবেশবান্ধব সুতির উদ্ভাবন।


কটন কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনালের মতো সংগঠনগুলো এমনকি প্রভাব পরিমাপে সূচক উদ্ভাবন করেছেন, যা স্পষ্ট করছে কোন উদ্ভাবন সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব। জৈবগর্ভস্থ কাপড় ও ক্ষুদ্রআঁশ১ থেকে সূক্ষযন্ত্রনির্ভর কৃষি ও কার্বন-নিরপেক্ষ চাষাবাদের মাধ্যমে তুলার উন্নয়নকারীরা ধারাবাহিকভাবে ধাপে ধাপে দায়িত্ববোধের স্বরূপ প্রদর্শন করছেন।


আপনার ব্র্যান্ড অথবা পরবর্তী সংগ্রহের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলে তুলার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানুন। আরও বেশি অনুপ্রেরণার জন্য হোয়াট’স নিউ ইন কটনটিএম এর মতো উদ্যোগ দেখুন। সম্পূর্ণতায়, ধরনের মিশ্রনে ও সুতার উদ্ভাবনে এটি ফ্যাশন প্রযুক্তি২ প্রদর্শন করে। কাজ সম্পন্নের জন্য আরও প্রাকৃতিক পথে ফেরা অবশ্যম্ভাবী এবং আমাদের পথের মানচিত্র সুদূর বিস্তৃত রাখতে তুলার দিকে ফেরা ছাড়া গতি নেই।



উদ্ধৃতি

উৎস১: http://oceancleanwash.org/

উৎস২: https://cottonusa.org/expert-o...