কন্টেন্ট এড়িয়ে যাও

সুতার বর্তমান ও ভবিষ্যত চাহিদা নির্ধারণ করে দেয় কোন বিষয়গুলো?

এটার শুরুটা ভোক্তার কাছ থেকে

সাপ্লাই চেইনজুড়ে সুতা পছন্দের বিষয়টি পরিণামে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য পছন্দে নেমে আসে। ব্র্যান্ডগুলো এবং খুচরা বিক্রেতারা বিজ্ঞাপন দিতে পারে এবং পোশাক ও গৃহসজ্জার পণ্য দোকানে রাখতে পারে। কিন্তু সেই পণ্য যদি ভোক্তা তার বাজেটের মধ্যে পছন্দের তালিকায় না রাখতে চায়, তাহলে ওই্ পণ্যগুলো আর নড়বে-চড়বে না। কার্যকর পণ্য চাহিদা (অথবা তার অনুপস্থিতি) সাপ্লাই চেইন হয়ে বস্ত্র উৎপাদনকারী পর্যন্ত প্রভাব ফেলবে। এবং পরিণামে সুতা সরবরাহকারীর ওপরেই সেই প্রভাব পড়েবে—তা সে তুলার মতো প্রাকৃতিক সুতাই হোক আর পলিয়েস্টারের মতো কৃত্রিম সুতাই হোক।

পরিবর্তনশীল যেসব বিষয় বস্ত্রের সুতার চাহিদাকে প্রভাবিত করছে তাকে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক (প্রযুক্তিসহ) ও জনমিতিক ধারা, এবং গ্রাহক পছন্দে বদলের ভিত্তিতে ভেঙে ফেলা যেতে পারে।

বস্ত্রসহ সকল ধরনের পণ্য ও সেবার চাহিদা দীর্ঘ মেয়াদে বৃদ্ধির চালিকা শক্তি হচ্ছে জনসংখ্যা ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির বিষয়টি। যদিও বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার স্লথ হয়েছে, প্রকৃত সংখ্যাটা এখনও বাড়ছে। আগামী এক দশকে নিট আরও প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মানুষ এই ধরায় যুক্ত হবে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বার্ষিক গড়ে ২.৪ শতাংশ জিডিবি প্রবৃদ্ধির ভবিষ্যদ্বাণীর বিষয়টি। এই দুয়ে মিলে আগামী দশকে বার্ষিক সুতার চাহিদা বর্তমান থেকে বেড়ে ২৮ মিলিয়ন মেট্রিকটনে পৌছে যাবে (ওয়ার্ল্ড সাপ্লাই অ্যান্ড ডিমান্ড রিপোর্ট, ২০১৭, পিসিআই উড ম্যাকেঞ্জি)।


ফ্যাশন পেন্ডুলাম

সম্ভাব্য এই চাহিদা বৃদ্ধির কতটা তুলার দিকে গড়াবে আর কতটা বিকল্প সুতার দিকে যাবে তা বহুলাংশে নির্ভর করবে ভোক্তার সুতা পছন্দের ওপরে। এটা আবার নির্ভর করবে বেশ কিছু বিষয়ের ওপরে যেমন ডিজাইন, কার্যকারিতা, আরামদায়ক, পরিষেবা, অনুধাবনযোগ্য টেকসই অবস্থা এবং তুলনামূলক দাম। চাহিদার ক্ষেত্রে এই বদল স্পষ্টভাবে আছে ফ্যাশন পেন্ডুলামের ভেতরে যা সব সময় তুলা ও কৃত্রিম সুতার মধ্যে ঘুরতে থাকে।

বিগত কয়েক দশকে কৃত্রিম সুতার (প্রধানত পলিয়েস্টার ও ফিলামেন্ট) কাছে তুলা বাজার হিস্যা হারিয়েছে এটা সত্য। কিন্তু তুলা আজ্ও বৈশ্বিক ভোক্তাদের কাছে একটি চিরজীবী পছন্দ হিসেবে রয়ে গেছে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে নিয়মিতভাবে গ্লোবাল লাইসস্টাইল মনিটর গবেষণা করে আসছে কটন কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনাল ও কটন ইনকরপোরেটেড। এই গবেষণায় তারা দেখিয়েছে যে তুলার প্রতি ভোক্তা পছন্দের বিষয়টি আজও অত্যন্ত ভালো। কারণ এর অনুধাবনযোগ্য সুবিধাগুলো। যেমন, অন্যান্য সুতার তৈরি পণ্যের তুলনায় এটা ‘অধিকতর আরামদায়ক’ এবং ‘কোমল’। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে ভোক্তারা তুলাকে কৃত্রিম সুতায় তৈরি পোশাকের চেয়ে ‘অধিকতর নির্ভরযোগ্য’, ‘সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য’ এবং ‘অধিকতর টেকসই’ হিসেবে দেখে থাকে। ভোক্তা পছন্দের এসব শক্তপোক্ত বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, প্রতিযোগিতায় তুলা বেশ ভালোভাবেই লড়ায় চালিয়ে যাবে। অবশ্য, এ ক্ষেত্রে অন্যান্য শর্ত যেমন ডিজাইন, কার্যকারিতা ও পণ্যের পরিষেবার মতো বিষয়গুলো ভোক্তা চাহিদা অনুযায়ী মেটাতে হবে।


টেকসইযোগ্যতা বিবেচনায় সময়টা তুলার পক্ষে

‘টেকসইযোগ্যতা’ ও ‘পরিবেশ-বান্ধব’ এ দুটি এখন ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দুটি ক্ষেত্রে সব দেশেই ভোক্তার অনুধাবনে তুলা দীর্ঘদিন ধরেই অনেকে এগিয়ে আছে। কারণ, বিশ্বজুড়ে সকল ধরনের সুতার মধ্যে তুলা অব্যাহতভাবে সবচেয়ে টেকসই হওয়ার প্রমাণ রেখে চলেছে। সর্বসাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ উত্তরদাতাই তুলাকে পরিবেশের জন্য নিরাপদ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেখানে পলিয়েস্টারকে নিরাপদ মনে করছেন মাত্র ৪৫ শতাংশ উত্তরদাতা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পোশাক কেনার পরবর্তীতে তার টেকসইযোগ্যতার বিষয়টি বিভিন্ন ধরনের সুতার ক্ষেত্রে একটা অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আর পরিবেশ পর্যবেক্ষকেরা স্বাদু পানি ও সামুদ্রিক জলজ উভয় পরিবেশে কৃত্রিত ‘সুতার ক্ষুদ্রকণা’র ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির বিষয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ, এগুলো সামুদ্রিক খাবার ও পানির সরবরাহকে দূষিত করে ফেলছে। সর্বসাম্প্রতিক গ্লোবাল লাইফস্টাইল মনিটর ডেটায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী সুতার বিষয়ে সচেতন ভোক্তাদের মধ্যে ৮৪ শতাংশই এখন এটা বিশ্বাস করে যে বস্ত্রখাতের জন্য সুতার ক্ষুদ্রকণার দূষণ হচ্ছে পরিবেশের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। সুতার ক্ষুদ্রকণার দূষণের বড় অংশই ঘটছে কৃত্রিম সুতার পোশাক প্রক্রিয়াকরণ ও পরিস্কারকরণের মাধ্যমে। জলজ পরিবেশে তুলা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সুতা দ্রুতই পচেগলে যায়। যেখানে পলিয়েস্টারের লাগে ১২৫ বছরের বেশি সময়। আর স্থলজ পরিবেশে সেটা লাগে আরও বেশি সময়। যেহেতু দুষণের বিষয়ে ব্রান্ড ও ভোক্তাদের সচেতনতা বাড়ছে, সেহেতু সময় তুলার পক্ষে থাকার বিষয়টি আরও সুস্পষ্ট হয়েছে।


পণ্যের দামের বিষয়টি এখনও বিবেচনার শীর্ষে

ভোক্তার পোশাক কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে ডিজাইন, রং, কার্যকারিতা, পরিষেবা ও টেকসইযোগ্যতার মতো বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু তার পরও দামের বিষয়টি আজও বিবেচনার শীর্ষে রয়েছে। তুলা দিয়ে তৈরি পণ্য সাধারণত প্রতিযোগিতামূলক হলেও, সেগুলো প্রায়শই সস্তার পণ্য নয়। গুণগত মান প্রশ্নে প্রাকৃতিক সুতা হিসেবে তুলার প্রাপ্যতার বিষয়টি বিশ্বজুড়ে সব সময়ই উৎপাদন মৌসুমের আবহওয়া পরিস্থিতির ওপরে নির্ভর করে। পাশাপাশি এটা চাষ করে অন্যান্য ফসলের তুলনায় কেমন অর্থনৈতিক লাভ আসবে সে বিষয়টিও বিবেচনায় থাকে। সে তুলনায় পলিয়েস্টারের(বৃহত্তরভাবে শিল্পজাত পণ্য যা পেট্রোলিয়াম পদার্থ প্রক্রিয়াকরণের সময় উপজাত হিসেবে উৎপাদিত) দাম সেভাবে ওঠানামা করে না। বিশেষ করে বিগত ২৫ বছর ধরে এ কথাটা সত্য। এই সময়ে চীন তার পলিয়েস্টার ভিত্তিক বস্ত্রের সুতা তৈরি সক্ষমতা বিরাটভাবে সম্প্রসারিত করেছে। বর্তমানে দেশটি বৈশ্বিক উৎপাদনের ৭০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করছে। বর্তমান চাহিদা বিবেচনায়, চীনের পলিয়েস্টার ভিত্তিক অবকাঠামোর আানুমানিক ৪০ শতাংশেরই যে পরিমাণ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে, সে পরিমাণে বিক্রি করার জায়গা নেই। এর ফলে প্রায়শই উৎপাদন খরচের চেয়ে দামটা নিচে নেমে যেতে বাধ্য হয়। এর ফলে আবার অন্যান্য সুতার (বিশেষত তুলা ও উলের মতো প্রাকৃতিক সুতা) সঙ্গে পলিয়েস্টারের একটা অন্যায্য প্রতিযোগিতা হয়।


তুলাকে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখা

ভোক্তা চাহিদার ক্ষেত্রে ভিত্তিমূল হিসেবে পরিণত হবে জনসংখ্যা চিত্র ও সাধারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয়গুলো। অবশ্য, বিশ্ববাজারের অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পণ্যের মতো, ভোক্তারাই পরিণামে ঠিক করে নেবে কোনটা কিনবে আর কোনটা কিনবে না। তুলায় তৈরি পোশাক ও গৃহসজ্জার পণ্যের সামনে দামের বিষয়টি একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে এটা সত্য। বিশেষ করে যতক্ষণ পর্যন্ত চাহিদার চেয়ে পলিয়েস্টার উৎপাদন সক্ষমতা বিরাট আকারে বেশি থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত।তবে ভোক্তার পণ্য কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অন্যান্য যেসব বিবেচ্য বিষয় রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে তুলা অত্যন্ত ভালোভাবে প্রতিযোগিতা করে যাবে। যেমন, আরামদায়ক, নির্ভরযোগ্যতা ও্ বিশ্বাসযোগ্যতা। টেকসইযোগ্যতার অন্যান্য ক্ষেত্রে, পরিবেশগতভাবে সবচেয়ে নিরাপদ সুতা হিসেবে তুলার ভাবমূর্তি ভোক্তার কাছে আরও উজ্জ্বল হবে। কারণ বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্র সুতাকণার দূষণের বিষয়টি ধীরে ধীরে আরও দৃশ্যমান হচ্ছে। যখন পলিয়েস্টার ও অন্যান্য কৃত্রিম সুতা তৈরির প্রকৃত খরচ, ভোক্তা পরিষেবা এবং পণ্যের পচনশীলতার মতো বিষয়গুলো স্পষ্ট হবে, তখন গুণগত মানের তুলাভিত্তিক পণ্যের তূলনামুলক কিছুটা বেশি খরচের বিষয়টি ভোক্তা এবং পন্যের ডিজাইনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের কাছে খুবই যৌক্তি বলে মনে হবে।


গ্লোবাল লাইফস্টাইল মনিটর, সুতা অর্থনীতি ও সুতার টেকসইযোগ্যতা নিয়ে আরও বেশি তথ্য পেতে আপনার অঞ্চলে কটন ইউএসএ প্র্রতনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করুন: (https://cottonusa.org/staff).


১. সূত্র: https://cottonusa.org/uploads/... ; https://www.cottoninc.com/mark...

২. সূত্র: https://www.cottoninc.com/mark...