কন্টেন্ট এড়িয়ে যাও

পণ্য সম্পাদনে ধারাবাহিকতার গোপন সূত্র

একজন ভোক্তা খুশী হলে বারবার আসবেন। আপনার পণ্য মাসের পর মাস এবং দোকান থেকে দোকানে স্থান পাবে, এটা কীভাবে নিশ্চিত করবেন?

ভোক্তা সমস্যা

তাঁর আছে একটি পছন্দের ব্র্যান্ড এবং পছন্দের ক্ল্যাসিক একটা স্টাইল। তিনি এগুলোকে ভালোবেসে আসছেন এবং নিজের আস্থাশীল সঙ্গীর মতো করে এগুলোর ওপরে নির্ভর করেন। ‍দুঃখের কথা হচ্ছে, তিনি এটার জীবন-মেয়াদের সর্বোচ্চটা নিয়ে ফেলেছেন্। এখন এই স্টাইলটা বদলে নেওয়ার সময় এসেছে। এই স্টাইলটাই তাকে বহু বছর ধরে অত্যন্ত আরাম ও সন্তুষ্টি দিয়েছে।

তিনি এটার মতো আরেকটা পেতে খুঁজতে শুরু করে দিলেন। ভাবনাটা এমন ছিল যে এটা হয়তো বেশ সহজই হবে। তিনি প্রথমে একটা অনলাইন কেনাকাটার ঠিকানায় ঢু মারার সিদ্ধান্ত নিলেন।তিনি তাঁর অর্ডারটা পেয়েও গেলেন। কিন্তু এমন কিছু পেলেন, যা মোটেও আগেরটার মতো নয়। তিনি বুঝতে পারলেন, এটার স্টাইলটা আগের মতো, একই ব্র্যান্ডের এবং রংটা্ও এক। কিন্তু আসার পর দেখলেন এটা আসলে আগেরটার মতো অবিকল নয়। তাৎক্ষনিকভাবে তিনি বুঝে উঠতে পারলেন না, কেন এমনটি হলো।

তিনি ভেবে বের করার চেষ্টা করলেন, আসল পণ্যটি কোন দোকান থেকে কিনেছিলেন। তিনি সেই দোকানে চলে গেলেন। খুঁজে পেলেন একটা টেবিল যেখানে গাদা করে রাখা আছে পণ্য যা আগের সেই পণ্যের মতোই মনে হচ্ছে। কিন্তু এখানে মনে হচ্ছে কোথা্ও কোনো গলদ আছে। কী হলো তার সেই পুরোনো পছন্দের জিনিসটার? এটা অন্যরকম মনে হলো। এটার গড়নটা আলাদা। এটাতে কিছুটা অদলবদল করা হয়েছে, যাকে তিনি মনে করছেন অর্থহীন।

তিনি ওই স্টাইলের লেবেলে চোখ বুলিয়ে নিলেন। দেখতে পেলেন একই ধরনের পণ্য অনেকগুলো দেশে উৎপাদিত হয়েছে। এক দেশের পণ্যের চেয়ে অন্য দেশেরটি গুণগত মানে আলাদা কি না তা বুঝতে কিছুটা সময় ব্যয় করলেন। একটি দেশের গুণগত মান অপর একটি দেশের চেয়ে ভিন্ন কেন, সে বিষয়ে নিজের মতো করে একটা তত্ত্ব সৃষ্টি করতে লাগলেন তিনি। শেষমেষ এই তত্ত্ব দাঁড় করালেন যে এই রহস্যের সমাধানের সূত্র আসতে পারে উৎস দেশ শনাক্তকারী লেবেল থেকে।

তিনি কেন এটা ভাবলেন? কোনো একটা ব্র্যান্ডের কী এত এত স্থান থেকে পণ্য কেনার দরকার আছে? ভাবলেন, কেন তার প্রিয় ব্র্যান্ডগুলোকে এভাবে জটিল করে ফেলতে হলো বিষয়গুলোকে? তিনি প্রত্যাশা করেন, তার প্রিয় ব্র্যান্ডগুলো পছন্দেরই থেকে যাবে। কারণ, তার আদি পছন্দটা তারাই তৈরি করে দিয়েছে। তারা অতীতে তার চাহিদাটা বুঝতে পেরেছিল। তার এখন কেন এভাবে তাকে হতাশ করবে? এখন তার ভাবনার বিষয় একটাই: যেটাকে তিনি পছন্দ করেন, সেটার মতো আরেকটা নিখুত পণ্য খুঁজে পাওয়া।

তিনি খবরের দিকে মনোনিবেশ করতে লাগলেন। চিন্তা করতে লাগলেন, এখন তার প্রিয় স্টাইলটা অনেক দেশ তৈরি করার কারণে যে অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছে তা নিয়ে। তিনি এখন পড়ছেন একটি দেশের পাল্টা শুল্ক আরোপ, অন্য একটা দেশের গণঅসন্তোষ, কোনো একটা দেশের প্রতিকুল আবহা্ওয়ার ধরন বা কাজের পরিবেশের মতো খবরগুলো।

তিনি ভাবতে শুরু করেছেন, তার পছন্দের স্টাইলটার সরবরাহ বিভিন্ন স্টোরে রাখার জন্য প্রিয় ব্র্যান্ডগুলো কীভাবে এই খ্যাপা পৃথিবীকে দাপিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রযুক্তির এই সময়ে এসেও কেন এটা ঘটতে পারে না?

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে তিনি সংকল্পবদ্ধ!

তিনি বিষয়টা পরিত্যাগ করতে প্রস্তুত নন।বন্ধুদের সঙ্গে একদিন আলোচনার সময় তাঁর সমস্যার বিষয়টা বলেই ফেললেন। বন্ধুরা্ও তখন একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরলেন। তারা সবাই মিলে তখন কেন এটা ঘটছে তার আরও বেশি সূত্র বের করতে উঠেপড়ে লাগলেন।

দ্রুতই তারা জানতে পারলেন, পণ্যের লেবেলে উৎস দেশের যে উল্লেখটা থাকে সেটা কেবলই যে দেশে স্টাইলটা জোড়া দেওয়া হয় তাকে নির্দেশ করে। কোন দেশে থেকে পণ্যটার কাচামাল আসছে, এ ক্ষেত্রে তার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি জানতে পারলেন, তার পছন্দের স্টাইলটার জন্য বিবরণী দেওয়া হয়েছে। আর প্রতিটি দেশকেই একই ধরনের বিবরনী দেওয়া হয়েছে।

কেন তিনি অব্যাহতভাবে ভাবতে লাগলেন, সেগুলো কী আরও বেশি এক রকম নয়?

তিনি ভাবছেন তার পছন্দের খাবারের রন্ধনপ্রণালী নিয়ে। এবং এখন এটা তার কাছে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। দেখা যাচ্ছে, তিনি একটা রন্ধনপ্রণালীর পুরোটা নিখুঁতভাবে অনুসরণ করেছেন। কিন্তু উপকরণের গুণগত মানের কারনেই তার খাবারটার চূড়ান্ত স্বাদ একেবারে ভিন্ন হয়ে গেল।

তিনি ভাবলেন, তার পছন্দের স্টাইলের জন্য উপকরণনগুলো কোথা থেকে আসে। এটা খুঁজে পাওয়ার কোনো জায়গা নেই। তিনি ওই ব্র্যান্ডের গ্রাহকসেবা বিভাগে চিঠি লিখলেন। তারা জানিয়ে দিল, এ বিষয়ে তারা কোনো ধরনের সাহায্য করতে পারবে না। ওই তথ্য তাদের কাছে নেই। এই তথ্য পাওয়া যাবে না, তা কী কর হয়?

তিনি তার প্রিয় ব্র্যান্ডের লেবেলটা আরেকবার পড়ে নিলেন। দেখলেন, এখানে একটাই উপাদান আছে: শতভাগ তুলা। কেন এটা এতটা জটিল? সব তুলাই কি এক রকম নয়?


বিজ্ঞ ব্র্যান্ডের সমাধান

যদি তিনি একটা বিজ্ঞ ব্র্যান্ডের উৎস সংশ্লিষ্ট কর্মীদের কাছে জিজ্ঞাসা করতেন, তাহলে জানতে পারতেন যে, ‘এই গোপন সূত্রটা অত্যন্ত সাদামাটা’।

বিজ্ঞ ব্র্যান্ডগুলো আলোকপাত করে সর্বনিম্ন সাধারণ বৈশিষ্ট্যের দিকে। পণ্যের সার্বিক চেহারা কী হবে, তার ওপরে এই বিষয়টার অবদানই সবচেয়ে বেশি। এটাই পণ্যের মানদণ্ড ঠিক করে দেয় ও এটার নিশ্চয়তা দেয় যে, প্রয়োজন হলে পণ্যের উৎসস্থল পর্যন্ত পুরো পথটা খুঁজে বের করা যাবে (অনুসরণযোগ্যতা)।

সেরা ব্র্যান্ডগুলো তাদের সকল কাচামালের উৎস ও গুণগত মান বুঝে নেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত যত্নশীলতার পরিচয় দিয়ে থাকে। তারা এটা উপলব্ধি করে যে উৎপাদন প্রক্রিয়ার পুরোটাই সমান নয়। তারা এটা্ও ‍উপলব্ধি করে যে যদিও এটা শতভাগ তুলা, তারপরও এটার চাষের পদ্ধতি বিশ্বজুড়ে সব খানে এক নয়।

স্টাইলের নিজস্ব মূল্যমানের কমবেশি ৬০-৭০ ভাগ নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট কাপড়ের ওপরে। তাই পণ্যের মান প্রমিত করার জন্য তাদের সময় ও শক্তি ব্যয় করার এটাই উপযুক্ত জায়গা। পণ্যের সংগতিপূর্ণ হওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে এটার রয়েছে সর্বোচ্চ প্রভাব। এই ক্ষেত্রে বৈচিত্রতা হ্রাস পেলে, চূড়ান্ত পণ্যের বৈচিত্রতা ব্যাপকভাব কমে যায়।

পণ্যকে সংগতিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো অংশীদার হচ্ছে নিবিঢ়ভাবে সংযুক্ত একজন বৃহৎ পরিবেশক যে একাধারে সুতা কাটে, বয়ন করে, রং করে এবং আপনার কাপড়ের কাজে পূর্ণতা আনে। আবার ওই পরিবেশক সেই পন্য বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দিতেও পারে। পণ্য সংগতিপূর্ণ করার জন্য তাদের থাকবে আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য-মান যা পুনপৌনিকভাবে প্রযোজ্য এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।

অনেকেই তাদের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা ব্যবহারের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে থাকে। তারা এটা অনুভব করে যে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত তুলা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ মানদণ্ড মেনে উৎপাদন করা হয়ে থাকে। সেটা নিশ্চিত করার জন্য চাষাবাদের ক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট মানের একটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন খামারে উৎপাদিত তুলার আাঁশ গুণগত মানের ভিত্তিতে শ্রেণিবিন্যাস করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দপ্তরের (ইউএসডিএ) রয়েছে সর্বাধুনিক পদ্ধতি। এটা এমন একটা পদ্ধতি যার ওপরে তারা আস্থা রাখতে পারে।

যদি যাত্রাটা শুরু করেন যুক্তরাষ্ট্রের তুলার সঙ্গে। আর কাপড় তৈরি করেন নিবিঢ়ভাবে সংযুক্ত এমন একজন অংশীদারের সঙ্গে যে একই যন্ত্র ও উৎপাদনের উপকরণ দিয়ে সুতা কাটা, বয়ন করা এবং কাপড়ে রং করার কাজটা করে দেয়। তাহলেই বিজ্ঞ ব্র্যান্ডগুলোর জন্য তাদের কাপড়কে বিভিন্ন দেশে জোড়া দেওয়ার জন্য পাঠানোর কাজটা অধিকতর সহজ হয়ে যায়। এমন পর্যায়ের নিয়ন্ত্রণ এ বিষয়ে সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা দেয় যে সেই পণ্যটা ভোক্তার পছন্দের স্টোরে গিয়ে জমা হয়েছে। রয়েছে অনেকগুলো উৎস দেশ। এটা দেখতে হবে তার সেই পুরোনো সেই পছন্দের মতোই। তেমনই অনুভূতি দেবে। স্থায়িত্বও হবে আগের মতোই।

ওপরে বর্ণিত এই গল্পটা বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রচিত।