কন্টেন্ট এড়িয়ে যাও

টি-শার্ট ও ডেনিম ছাড়িয়ে: নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকে উদ্ভাবনই তুলার রূপান্তর ঘটায়।

বিশ্বব্যাপী

টি-শার্ট ও ডেনিম জিন্সের মতো ব্যবহৃত ও প্রকৃত ঐতিহ্যগত পণ্য থেকে তুলার রূপান্তরের বিষয়টি পরিষ্কার। নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকে পিয়ার৫৯ স্টুডিওর রানওয়েতে আসা যুক্তরাষ্ট্রের তুলার পোশাকের মধ্যে ছিল সিল্কের মতো মসৃণ কোরালের ন্যায় পোশাক, ফিউচারিস্টিক ত্রিমাত্রিক ফুলের ডিজাইনসহ কারুকাজময় রঙ্গিন গাউন এবং কালো ও সাদা পপলিন রূপান্তরিত হয়ে ভিন্নধর্মী জাম্পস্যুট। উদ্ভাবন এক উৎসাহমূলক পথে তুলার রূপান্তর ঘটিয়েছে।

সুপিমা ডিজাইন প্রতিযোগিতার রানওয়ে শোর পর, নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকের প্রতিষ্ঠাতা ও কাউন্সিল অব ফ্যাশন ডিজাইনারস অব আমেরিকার (সিএফডিএ) সাবেক নির্বাহী পরিচালক ফার্ন ম্যালিসের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। তুলায় উদ্ভাবন সম্পর্কে তাঁর মতামত জানতে পারি।

ম্যালিস বলেন, “আপনি যদি সত্যিই বুদ্ধিমান ও সৃজনশীল হন, তাহলে তুলা দিয়ে আপনি সবকিছুই করতে পারবেন।” তিনি আরও বলেন, “আপনি জানেন, মানুষ তুলার রূপান্তর ঘটাচ্ছে এবং পুনরায় উদ্ভাবন করছে এর ব্যবহারের পথ। এটি এমন আঁশ, যা সবাই পরতে চায়। তাই টি-শার্ট ও জিন্সের বাইরে একে অনেক বেশি ব্যবহার উপযোগী করতে কাজ করছে সবাই। আমি কল্পনা করিনি সম্ভব এমন ক্ষেত্রেও তুলার ব্যবহার দেখছি।”

অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় তৈরি পোশাককে সিল্ক, চামড়া ও কৃত্রিম আঁশ বলে ভুল করতে দেখা যায়। ফ্যাশন ডিজাইনাররা তুলার কাপড়কে রোদে রঞ্জিত, সাজানো, পাকানোর কাজটি করেছেন এবং একে রূপান্তর করেছেন ভেলভেটে। বিজয়ী ডিজাইনাররা এমনকি তুলার আঁশকে প্রচলিত বুনন ছাড়াই সংযুক্ত করেছেন, যেন পোশাকটিকে খুলে ফেলা যায় এবং অংশগুলোকে পুনরায় সম্পূর্ণ নতুন কোনো ধারায় তৈরি করা সম্ভব হয়। আর বিষয়টিকে তিনি তুলনা করেছেন লেগোর সঙ্গে।

গত তিন দশকে ফ্যাশনের সব ক্ষেত্রে অন্যতম বিষয় হিসেবে তুলার ব্যবহার দেখেছেন বলে মনে করা ম্যালিসকে। যদি তুলার এমন ব্যবহার দেখিয়ে তাঁকে অবাক করা যায়, তাহলে বলতে হবে উদ্ভাবন তুলার ফ্যাশন ডিজাইনকে সঞ্চারিত করেছে।

ফ্যাশন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এফআইটি) ফ্যাশন ডিজাইন বিভাগের চেয়ারম্যান আইলিন কার্প বলেন, তুলা নিয়ে উদ্ভাবনের কারণে শ্রেণীকক্ষে ডিজাইনাররা ব্যাপকহারে এর ব্যবহার করছেন।

কার্প বলেন, আমরা ব্যপকভাবে তুলার ব্যবহার করছি। প্রথম সেমিস্টারে এর ব্যবহার শুরু করি এবং সেলাইসহ কুচির ক্লাস এর ব্যবহার হয়। এরপর আমরা চলে যাই আরও এগোনো সেমিস্টারে। আমাদের শিক্ষার্থীরা পরিবাশবান্ধব পদ্ধতি ও পরিবেশবান্ধব ধরনের রঞ্জন পদ্ধতি ব্যবহার করে।

তিনি আরও বলেন, ফ্যাশন ডিজাইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এফআইটি টেক্সটাইল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের (টিডিএম) সঙ্গে মিলে ডেনিমের একটি ক্যাপস্টন প্রকল্পে কাজ করে। এখানে তারা সব তুলার কাপড়ের সংগ্রহের পুরো প্রক্রিয়াটি শেখে। আর এর শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের ১৮,৬০০ পারিবারিক তুলার খামারের একটিতে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের তুলাকে এতটা ব্যাপকভাবে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা জানায় ফ্যাশন শিল্পকে উৎসাহিত করা হলে, সেটি পোশাকের ওপরও প্রভাব ফেলবে। আর এর প্রভাব পড়বে ব্র্যান্ডগুলোর তৈরি ও খুচরা বিক্রেতাদের বিক্রিতে। এছাড়া, সুতির পোশাকের ওপর ভোক্তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টির প্রক্রিয়ায়ও এটি প্রভাব ফেলবে।

সুপিমা ২০১৮ ডিজাইন প্রতিযোগিতার বিজয়ী ফ্যাশন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির শিক্ষার্থী লিলি শাই বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তুলার কাপড়ে তিনি কাজ করা উপভোগ করেন এবং নিজের সংগ্রহে যুক্তরাষ্ট্রের তুলার ব্যবহার তিনি অব্যাহত রাখবেন।

শাই বলেন, “আমি সবসময়ই প্রাকৃতিক আঁশ পছন্দ করি, কারণ এর এটি ভালো লাগে। তিনি আরও বলেন, “এটি সত্যিই মসৃণ ও উৎকৃষ্ট; আমি কিনতে পারি এমন অন্যান্য সুতির চেয়ে এটি ভিন্ন। আপনি এটি দিয়ে অনেক কিছুই করতে পারেন।”

তুলার সবচেয়ে বড় দিকটি হলো, এটি সবসময়ই গাছে জন্মানো প্রাকৃতিক আঁশে তৈরি একটি অনায়াসের কাপড় হিসেবে থাকবে। এরপরও এটি দিয়ে তৈরি পোশাকের কার্যক্ষমতা কৃত্রিম আঁশের মতো এবং এটি মূল্যবান পোশাকের শৈল্পিক উপাদান।

লিখেছেন: জেন সার্টার

কটন কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার